Love is Just A Four Letter Word

    এই নভেলার ইতি এখানেই। ঋভু-মিতুল-তোজোর এবার একটু একা থাকা প্রয়োজন। এত ভালোবাসা ওরা পেয়েছে তার জন্য ওরা অনেক ধন্যবাদ জানিয়েছে। এই খারাপ সময়ে নিজেকে ভালো রাখার অনুরোধও করেছে। আমি এটুকু জানাতে এলাম। জানানো হয়ে গেছে। চলে যাচ্ছি। ওক্কে বাই!              


                     || ১০ ||
"ইভাবে মন খারাপ করে আর কতদিন বসে থাকবি? যা গিয়ে সটান জিগ্যেস কর তোর সাথে এই পুরকিবাজি কেন করলো মহান ঋতবাণ বসুরায়!"- তোজোর গলার স্বরে তিক্ততার আভাস পেতে আমার দেরি হল না। রিইউনিয়নের সেই সন্ধ্যের পর পাঁচ দিন কেটে গেছে। একা ফিরতে দেখে দিদান জিগ্যেস করেছিল-"কি রে?ঋভু কোথায়?তুই একা ফিরলি?" আমি হেসে বলেছিলাম-"আসলে ওর এতদিন পর বন্ধুদের সাথে দেখা হয়েছে। আর আমারও একটা পরীক্ষা আছে নেক্সট উইকে। অনেক পড়তে হবে তাই..." দিদান কিন্তু আমার ফোলা চোখদুটোর দিকে গম্ভীর হয়ে তাকিয়েছিল। কথা না বাড়িয়ে আমি ঘরে চলে গেছিলাম। দাদুন বা দিদান কেউই তারপর থেকে এই বিষয় নিয়ে কথা বলেনি। রাতের খাওয়ার সময় চুপচাপ খেয়ে উঠে যাই। ঋভু দা কিছু একটা বলবে বলবে করেও বলেনি। দু একবার মুখোমুখি হলেও আমি সরে গেছি নিঃশব্দে। 
"মিতুল...এইই!! বালিশের পাশে দেখ সিগারেটের বাক্সটা আছে। দে তো!"- তোজো হাত দিয়ে আলগা ধাক্কা দিল। আমি ওর দিকে সিগ্রেটের বাক্সটা ছুড়ে মারলাম। ও একটা সিগারেট ধরিয়ে চুপ করে রইল কিছুক্ষণ তারপর বলল- "দিদান গতকাল এসে নেমন্তন্ন করে গেছে। তোর জন্মদিনের পার্টি কাল তার জন্যে। মালবিকা আর রুহির নাম্বারও নিল আমার থেকে।" 
"হুমম..."-আমি বিছানায় আঙ্গুল দিয়ে আঁকিবুকি কাটতে লাগলাম। 
"একবাড়িতে থাকলে আর কতদিন এড়িয়ে চলবি?দাদুন-দিদানের মনেও এরপর প্রশ্ন আসবে!"- তোজো শান্ত স্বরে বলল। 
"কিন্তু..."-আমি দুহাতে মুখ ঢাকলাম। 
"ওঠ! চ একটু ঘুরে আসি। ওঠ!"- তোজো আমার হাত ধরে হালকা টান দিল। 
"ধুররর! ছাড় না।আবার কোথায়..."- আমার কোনো কথা না শুনেই তোজো আমায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। বিকেলের দিকে গঙ্গার ঘাটে এসে বসলাম আমরা। এই ঘাটটা খালিই থাকে। চারপাশে গুটিকতক কালো মাথা দেখা যাচ্ছে। প্রতিবছর জন্মদিনে এত মজা হয়। কিন্তু আজ যেন বড্ড খালি খালি লাগছে। মনে হচ্ছে আমি যেন একটু একটু করে মিলিয়ে যাচ্ছি!আমি হাঁটুতে মাথা রাখলাম। তোজো চুপচাপ বসে আছে আমার পাশে। আমি ঘাড়টা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলাম। চোখ জ্বালা করছে...মাথাটা দপদপ করছে। সকালে দুবার বমিও হয়েছে... দিদানকে বলিনি। চিন্তা করবে বেকার। সারা শরীরে অস্বস্তি হচ্ছে আমার। নিজের উপর রাগ হচ্ছে ...খুব রাগ হচ্ছে। 
"মিতুল, এ নে। মুখটা এদিকে ঘোরা। দেখ!"-তোজো হালকা করে হাত ছোঁয়ালো আমার মাথায়। ওর দিকে ঘুরতেই দেখলাম কতগুলো প্রজাপতি বিস্কুট ওর হাতে। সেই ছোটবেলা থেকে প্রজাপতি বিস্কুট আমার খুব পছন্দের। তোজো কোন ফাঁকে গিয়ে কিনে এনেছে। ওর মুখের দিকে তাকালাম আমি। ও না থাকলে কি হত আমার? 
"খা! খিদে পেয়েছে তো তোর! ফেরার সময় ফিস কচুরি খাওয়াব।এখন এটা খা। চাইলে আমার সিগ্রেটেও দুটান দিতে পারিস। কাউকে বলব না!"- তোজো হেসে বলল।
"আজ মালবিকার সাথে দেখা করতে গেলি না? একটা ছুটির দিন ছিল। ওর সাথে না হয় একটু..."-আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই তোজো আমার কপালে একটা টোকা মেরে বলল- "এত ভাবিস না ভাই! ক্যাজ! এরকম একটা বুঝদার প্রেমিকা যেন আমার শত্রুরও হয়। ও-ই তো বলল মিতুলের আজ তোকে বেশি দরকার। তাই আমরা দুজনেই ঠিক করলাম আজকে আমরা ব্যাটারি সেভ করলে কাল ডিউরেশনটা বেশি পাব।" 
তোজো হাসলে ওকে বড্ড উজ্জ্বল দেখায়। স্কুলে জুনিয়ররা ওকে "সানফ্লাওয়ার" বলে ডাকতো। 
ঘাট থেকে ফেরার পথে কলেজস্ট্রিটে এলাম আমরা। কফিহাউসে ঢুকে টেবিল খালিই পেলাম । তোজো আমার মুখের দিকে তাকাল একবার তারপর সুকুমার দা'কে বলল- "কবিরাজি দুটো আর কালো দুটো।" কফিতে চুমুক দিয়ে তোজো আবার একটা সিগারেট ধরালো। আমি ওর দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললাম- "কি রে! সারাক্ষণ ইঞ্জিনের মতন ধোঁয়া ছাড়ছিস! আর কটা খাবি!"
"Look who's here! Ugly duckling with the Peacock!"- পাশের টেবিল থেকে কথাটা ভেসে আসতেই তাকালাম ওদিকে। পামেলা আর অভ্রনীল ! তোজোর মুখে একটা বাঁকা হাসি খেলে গেল! এ হাসির অর্থ আমি জানি। সামনের জন এইবার রোস্ট হয়ে শিক কাবাব হয়ে যাবে। তোজোর দিকে তাকিয়ে দুদিকে মাথা নাড়ালাম আমি। তোজো টেবিলে রাখা আমার হাতের উপর চাপ দিয়ে বলল- "আজ নয়!" তারপর পামেলার দিকে তাকিয়ে বলল- "What a surprise!  আরে ক্যাফে কফি ডে এন্ড চীল আজ এখানে! কি মনে করে?"
পামেলা আর কিছু বলার আগেই তোজো বলল - "আমি না হয় ময়ূর হলাম কিন্তু "আগলি ডাকলিং!" মেকআপ ছাড়া একদিন বাড়ির দরজাটা পেরোয়নি যে সে ডিসাইড করছে কে সুন্দরী! What a joke!" 

"Twaran! You are crossing limits now!"-অভ্রনীল পাশ থেকে বিড়বিড় করে উঠল।
"এ!রাখ তোর লিমিট! And you Ms. Pamela whatever don't go ahead of yourself! চল মিতুল!" - টেবিলে টাকা রেখে হেঁটে বেরিয়ে আসছিলাম আমরা হঠাৎ পিছন থেকে শুনতে পেলাম পামেলা বলছে- "Those pesky little things! I don't know how Writobaan endures her! He....He rejected me for that ugly...."
তোজো আমার হাত ধরে টানতে টানতে বেরিয়ে এল। ট্রামে উঠে চুপ করে বসে রইলাম আমি। ঋভু দা সহ্য করে আমায়? আমি কি এতটাই বাজে....তোজো ওর এক কান থেকে একটা ইয়ারফোন খুলে আমার কানে গুঁজে দিল। খুব জোরে "Numb" বাজছে! কিন্তু আমার কি ভালো লাগছে! 
বাড়ির গলির সামনে এসে তোজো দাঁড়িয়ে পড়ল। কি একটা ভাবল যেন। আমি পিছন ঘুরে বললাম- "কি হল?"
"তুই যা। আমি একটু আসছি!" 
আমি দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। শরীরটা বড্ড ভারী লাগছে। খুব বেশি কষ্ট পেলে বুঝি এরকম লাগে? বাড়ির গেটটার সামনে দাঁড়াতেই দেখলাম চিলেকোঠার ঘরে একটা পরিচিত ছায়া দেখা যাচ্ছে। ছায়া নয় মানুষটাই তাকিয়ে আছে গেটের দিকে! পামেলা দির মুখ আর কথাগুলো মনে পড়ে গেল আমার! দরজাটা খুলল রায়া পিসি। দিদান আমার মুখের দিকে তাকিয়ে উঠে এসে বলল- "কি...কি হয়েছে দিদিভাই? তোর মুখটা এমন শুকনো কেন? রায়া দি ,হরি দা, চিনু জল...জল নিয়ে এসো কেউ!" 
আমি আর তাকিয়ে থাকতে পারছি না। শরীরটা আরো ভারী হয়ে আসছে! চোখ বুজে আসছে আমার! দিদান কি বলছে...আমি কিছু শুনতে পাচ্ছি না.....সব কেমন অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে....

চোখ খুলেই দিদান আর দাদুনের ঝুঁকে পড়া মুখ দুটো দেখলাম। দাদুন চিৎকার করে বলল- "গিন্নি! গিন্নি! দিদিভাই ! দিদিভাই..."
"আমি দেখতে পাচ্ছি বুড়ো! রায়া দি,ওআরএসটা গুলে নিয়ে এসো। এই দাদাভাই, তোজো দেখ দেখ..."- দিদানের দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখলাম জানলার কাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তোজো। দরজার বাইরে ঋভু দা! ঋভু দার চোখগুলো বড্ড বিষণ্ন দেখাচ্ছে! দিদান আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল- "খাবার আনি মা?তোজো বলল কিছু খাসনি..." দিদানের চোখদুটো ভেজা ভেজা। কেঁদেছে বোধহয়! ঋভু দা মনে হল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল তারপর দরজা থেকে সরে গেল।
পরের দিন সকালে ঘুম ভাঙল এলার্মের আওয়াজে। ঘড়ির দিকে চোখ গেল আমার। সকাল ৭টা। আজ আমার জন্মদিন। প্রতি বছর দাদুন-দিদান ছোটখাটো একটা পার্টির আয়োজন করে।ঋভু দা দেশে ফিরে আসায় এই বছর একটু বড়সড় পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু আমার যে কিছু ভালো লাগছে না! মুখে একটা তিতকুটে ভাব! চোখ খুলে বিছানায় শুয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। সিলিংটা বড্ড ধবধবে। দিদান বলেছিল তারার স্টিকার লাগাবে। সেটা আর হয়ে ওঠেনি। বিছানায় উঠে বসে পাশের টেবিলটা থেকে বাবা-মায়ের ছবিটা হাতে নিলাম। মা-বাবা বেঁচে থাকলে আজ ....ভাবনায় ছেদ পড়ল। দিদান দরজায় নক করে মৃদু স্বরে ডাকল- "উঠেছিস মা?" আমি উত্তর দেওয়ায় দিদান দরজা খুলে ঘরে ঢুকল।  জানলার পর্দাগুলো সরিয়ে  বিছানায় এসে বসল দিদান। আমার কোলে একটা প্যাকেট রেখে বলল- ''আজ বিকেলে এটা পরবি  কেমন?" আমি মাথা নেড়ে হাসলাম। 
দিদান আমার মাথায় হাত রেখে বলল- "মিতুল, গত কয়েকদিন ধরে তোকে বড্ড শুকনো দেখাচ্ছে। কি হয়েছে মা?"
দিদানের চোখগুলো পড়ে নিচ্ছে আমার লুকিয়ে রাখা কষ্টটা। তবুও...তবুও আমি মুখে বলতে পারছি না...আমি দিদানের কোলে মাথা রেখে বললাম-"কিছু না। কিছু হয়নি। তুমি একটু বোসো তো আমার কাছে। সব ঠিক হয়ে যাবে।" আমার গলা ধরে আসছে। দিদান মৃদু স্বরে বলল- "দিদিভাই, আমরা যত বড় হই, আমাদের পারস্পেক্টিভ তত চেঞ্জ হয় জানিস। বহু কিছুই এই পারস্পেক্টিভ বদলে দিতে পারে। তোর এখন বলতে হবে না কিছু। যখন মনে হবে বলতে চাস তখন বলিস কেমন?"

দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর দিদান চিনু কাকা,রায়া পিসি আর হরি-কাকে কাজের নির্দেশ দিতে লাগল। পর্দা থেকে সোফার কুশন, টেবিলে কার্টলারি সব পরিবর্তন হবে আজ। আমি সোফার উপর চুপচাপ বসে রইলাম। বাড়িতে আজ এত হৈচৈ। সব আমার জন্যে। আর আমি এরকম মনমরা হয়ে বসে থাকব? 
দেখতে দেখতে বারান্দার বুড়ো ঘড়িতে ঢং ঢং করে সন্ধ্যে ছ'টা বাজল। দিদান আমার পাশে এসে বসে বলল- "তুই এখানে কেন মা? চট করে জামাটা পরে আয়। আজ একটু ভালো করে সাজবি। যা।" দিদান জোর করে ঘরে পাঠিয়ে দিল আমায়। ঘরের দরজার সামনে আসতেই একটা খাম চোখে পড়ল আমার। খামটা দরজার ফাঁকে গোঁজা। খামটা হাতে নিয়ে আমি বিছানায় এসে বসলাম। চিঠিটা খুলতেই ঋভু দার হাতের লেখা ভেসে উঠল চোখের সামনে। ক্ষুদে ক্ষুদে অথচ পরিষ্কার। লিখেছে- "Mitul, I really need to talk to you. You have been avoiding my calls and texts. You don't even look at me anymore. Please , please meet me at the Attic at 8.30. Please!" 
চিঠিটা পড়তে পড়তে আমার চোখ ভিজে এল। আমায় এতবার প্লিজ কেন বলছে? আমি কে? আমায় তো সহ্য করে ও! বাইরের দরজায় টোকা পড়ল তার সাথে মালবিকা,রুহি আর তোজোর গলা শুনতে পেলাম। 
"খোলা আছে। চলে আয়।"- চিঠিটা খামের ভিতর ভরে বালিশের তলায় রেখে দিলাম। তোজোরা এসে খাটে বসল। রুহি আমায় দেখে চিৎকার করে বলল-এ কি? তোর চোখমুখের কি অবস্থা! তুই এরকম ভূতের মতন বসে আছিস কেন? তোর না জন্মদিন আজকে? যা! চোখমুখ ধুয়ে আয়!" 
মালবিকাকে ঝলমলে দেখাচ্ছিল আজ। তোজোও হাসিখুশি। আমি হেসে বাথরুমের দিকে পা বাড়ালাম। 
আমরা সবাই যখন নীচে নামলাম তখন প্রায় সাড়ে সাতটা। সবার মধ্যে কোথাও ঋভু দাকে খুঁজেই পেলাম না। তবে পামেলা এন্ড কো'কে দেখা গেল।দাঁত বের করে বিচ্ছিরি রকম হাসল পামেলা।  দিদান আমার পাশে এসে ফিসফিস করে বলল- "আমি ডাকিনি। তোর দাদুনের কাজ এটা। চল ওদিকে।কেক কাটবি চ।"

কেক কাটা হয়ে গেলে দাদুন পিয়ানো বাজাতে বসল। দোতালার বারান্দার দিকে ঋভু দাকে দেখলাম দাঁড়িয়ে আছে একা। আমায় দেখতে পেয়েই সরে গেল। 

সাড়ে আটটা বাজতেই মনটা অস্থির হয়ে উঠল। নিজের অজান্তেই আমি কিছুক্ষণ পরে নিজেকে চিলেকোঠার ঘরের সামনে খুঁজে পেলাম। দরজাটা ভেজানো। ঋভু দা দরজার ওপারে। আমার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর ওপারে। আমার এতদিনের আগলে রাখা অনুভূতিগুলো ওপারে। দরজাটা ঠেলতেই এক রাশ অন্ধকার এসে গ্রাস করল আমায়। হঠাৎই ঘরে জ্বলে উঠল ছোট ছোট আলো । আলোগুলো তারাদের মতন উজ্জ্বল। সারা ঘরে আমার ছবি। কোনোটায় আমি একা, কোনোটায় দাদুন-দিদানের সাথে আমার তোলা সেলফি। তোজোর সাথে ছবি। সবচেয়ে জ্বলজ্বলে আমার আর ঋভু দার ছবিটা। ঋভু দা স্কুল থেকে যেদিন গ্র্যাজুয়েট হয়, সেদিন তুলেছিল দিদান । পামেলা দি সেদিন কত নাটকই না করেছিল ঋভু দার সাথে ছবি তুলবে বলে। অথচ ঋভু দা ছবি তুলেছিল আমার সাথে। সেদিনের কথা মনে পড়তেই আমার মন ভালো হয়ে গেল।
"মিতুল!''- পিছন থেকে ঋভু দার গলা শুনে আমি ঘুরে দাঁড়ালাম। ঋভু দা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে, ওর গলা কাঁপছে। 
"I wanna say something to you. It's very urgent you know."- ঋভু দা সোজা তাকাল আমার দিকে।ওকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে বড্ড। আমার গলায় কি যেন একটা জমা বাঁধছে। অভিমান? 
"ঋভু দা... থাক না....মানে...!"-আমার কথা শেষ করার আগেই ঋভু দা বলে উঠল- "না মিতুল। আজকে আমায় বলতে দাও। You know ,i have a certain someone i like. And that person is you Mitul! You!''

আমি নিজের কানে কথাগুলো বিশ্বাস করতে পারছি না। এটা কি সত্যি? নাকি স্বপ্ন? ঘুম ভাঙলেই সব মিথ্যে হয়ে যাবে?
"আ...আ...মি...? তুমি আমাকে..."- আমি আর পারছি না নিজেকে সামলাতে। শরীরটা হালকা লাগছে আবার। চোখ দিয়ে জল পড়ছে। 
ঋভু দা কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল- "Listen to my heartbeats. Everytime i see you ,it beats so hard that I feel like I am gonna die! What have you done to me, Ms.Ahir Sen?"- ঋভু দার হৃদস্পন্দন আমি স্পষ্ট শুনতে পারছি। ঢিপ ঢিপ ঢিপ ঢিপ! আমার হাতদুটো আমার অজান্তেই ঋভু দাকে জড়িয়ে ধরল। ঋভু দা বলে চলল- 
তোমার মনে পড়ে স্কুলের সেই দিনটার কথা? যেদিন তুমি "Love is just a four letter word" গেয়েছিলে? সেইদিন....সেইদিন থেকে কেমন যেন সব বদলে যেতে লাগল। তোমার সাথে রোজ সময় কাটাতে কাটাতে I didn't know when I started to have feelings for you.You know when I realised that? যেদিন আমায় কলকাতা ছেড়ে ...এই বাড়ি ছেড়ে...তোমায় ছেড়ে চলে যেতে হয়! কিন্তু I had made a promise to myself যে যতদিন আমি যোগ্য না হচ্ছি I won't tell you about my feelings. I missed so many things in last six years. কিন্তু দাদুন-দিদান আমায় তোমার ছবি পাঠাতো। লন্ডনের সেই  ঠান্ডা দিনগুলোয় your smile was the only thing that kept me alive. রিইউনিয়নের দিন তুমি ওরকম ভুল বুঝলে আমায় but I turned Pamela down.ও দুঃখ পেয়ে আমায় জড়িয়ে ধরে। but you thought I like her. No, For last six years, I have only loved you.Yes! I love you ! I love you!" 
ঋভু দার শান্ত স্বর মাঝে মধ্যে কাঁপছে। আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।অথচ মনটা কি শান্ত লাগছে। ঋভু দার আঙ্গুলগুলো আমার চুলে বিলি কাটছে। তবে যে আমি ভাবতাম আমি একাই কষ্ট পাচ্ছি? 
"আ... আ.. আমিও..."- আমি আর সামলাতে পারলাম না নিজেকে। বহুদিনের অভিমান আজ বাষ্প হচ্ছে। ঋভু দার জামা ভিজে যাচ্ছে আমার চোখের জলে। অথচ আমার কান্না বন্ধ হচ্ছে না। 
"It's okay! Stop crying now! Stop...দেখো দেখো তোমার নাক লাল হয়ে গেছে..."- ঋভু দা আমার চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে  বলল-"চোখ বন্ধ করো। একটা গিফট আছে।" 
চোখ বন্ধ করতেই ঋভু দা আমার গলায় একটা ছোট নেকলেস পরিয়ে দিল। কয়েকদিন আগে শপিং মলের কাঁচে তো এটাই দেখেছিলাম আমি। ঋভু দা আমাকে ওর দিকে ঘুরিয়ে বলল- "পছন্দ হয়েছে?" 
আমি মাথা নেড়ে হাসলাম। ঋভু দা তাকালো আমার দিকে।ওর চোখের সমুদ্রে আবার ঢেউ আসছে। নীল চোখদুটো সম্মোহনী শক্তিতে টানছে আমায়। ঋভু দা আমার কপালে একটা চুমু খেল। হঠাৎই বাইরে থেকে তোজোর গলা শুনতে পেলাম। ও গান গাইছে -"দো দিল মিল রহে হে..." আমি আর ঋভু দা দুজনেই হেসে ফেললাম। 
আজ আমার ২১তম জন্মদিন। আজ আমি আমার জীবনের সেরা উপহার পেলাম। বাস্তবে ডিলান আর জোয়ানের মিল না হলেও আমার গল্পে হল। আমার ডিলান এখন খুশি হয়ে পিয়ানো বাজিয়ে গান  গাইছে - "Love is just a four letter word!"










Comments

Popular Posts