The Morning Has Broken 🌻

দুঃখিত এই পার্বিক বিরতির জন্যে। আসলে লেখার মতন মানসিক পরিস্থিতি ছিল না। নিন্দুকে বলে আমার সাধ আছে সাধন নেই। তা কতকটা সত্যিই বটে। তবে রটনা ও ঘটনার মধ্যের ফারাক তর্কসাপেক্ষ। ধন্যবাদ ঋভু আর মিতুলকে এত ভালোবাসা দেওয়ার জন্যে।       🌸🌸      

                     ||৫||

      

"Mitul, Do you love me?"- ঋভু দা আমার চোখের দিকে তাকাতেই আমি মাথা নিচু করলাম। আমি পারছি না ওই নীল চোখদুটোর দিকে তাকিয়ে থাকতে। ওই চোখদুটোয় বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের মতন গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে। আমি হারিয়ে যাব একেবারে। দূরে কোথাও খুব মিষ্টি সুরে পিয়ানো বাজছে। সুরটা আমার বড্ড চেনা। Bach? হ্যাঁ Bachই তো। পিয়ানোর শব্দ ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। আরো কাছে আসছে। আমি পিছন ফিরতেই দেখলাম ঋভু দা মিলিয়ে যাচ্ছে আমার ঘরের দেয়ালে আঁকা নীল সমুদ্রে। 

"Wake up, wake up, wake up.It's a brand new day!"- এলার্ম ক্লকের সুরেলা কণ্ঠে ঘুম ভাঙল আমার। কাল সারারাত বৃষ্টি হয়েছে। জানলার বাইরে চড়ুই পাখির বাসাটা কোনোমতে টিকে আছে। বাইরে একটা বৃষ্টি বৃষ্টি গন্ধ। আমি আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলাম বিছানায়। বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতেই দেখলাম  দাদুন পিয়ানো বাজাচ্ছে। আমাকে  দেখতে পেয়ে মাথা নেড়ে বলল- "Bonjour Mademoiselle !" "উফফ! সক্কাল সক্কাল নকশা! এই দিদিভাই ,একবার দেখে আয় না দাদুভাই উঠেছে কি না? জেট ল্যাগ কাটেনি বোধহয় এখনো।"-দিদান ড্রইং রুমের বাইরে ছোট ঝোলা টবগুলোতে জল দিতে দিতে বলল।  আমি মাথা নেড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে এলাম। দরজাটা নক করলাম কিন্তু ভিতর থেকে কোনো শব্দ এল না। প্রায় ৮.৩০টা বাজে। ঋভু দা কি এখনো ঘুমাচ্ছে? দরজার ফাঁক দিয়ে ওপাশ থেকে একটা নরম আলো বাইরে ভেসে আসছে। নিয়ন রঙের ওই ল্যাম্পশেডটা আইরিন পছন্দ করে কিনে এনেছিল। আমি আরেকবার নক করলাম। উত্তর নেই। দরজাটা আলগা ধাক্কা দিতেই খুলে গেল। এটা ঋভু দার বরাবরের অভ্যাস। দরজা কোনোদিন লক করে না। ঘরে ঢুকতেই টেবিলের পাশে রাখা ট্রলি ব্যাগগুলোর দিকে চোখ গেল আমার। কয়েকটা জামা কাপড় চেয়ারে ঝুলছে। এসির ঠান্ডা স্রোতে শিরশিরে অনুভূতি হচ্ছে একটা। নিয়ন আলোয় ঋভু দার মুখটা বড্ড স্বপ্ন মাখা লাগছে। একটা আলগা হাসি লেগে আছে ওর ঠোঁটের কোণে। আমি টেবিলে হেলান দিয়ে ওই দিকে তাকিয়ে রইলাম। পিকাসো হয়তো এই দৃশ্যকে নিয়ে একটা সুন্দর ছবি এঁকে ফেলতেন। ঋভু দা আমার দিকে ফিরে শুল। একটা নরম সুরের গানের মতন মিষ্টি লাগছে ওকে। বেডসাইড টেবিলে রাখা এলার্ম ক্লকটা ক্রিং ক্রিং স্বরে বেজে উঠতেই আমি ওটা বন্ধ করতে গেলাম। ততক্ষনে ঋভু দার ঘুম ভেঙে গেছে। ও চোখ খুলে সোজা আমার দিকে তাকালো। নীল সমুদ্র এখন স্থির। 

"আরে মিতুল,when did you come? Why didn't you wake me up?"- ঋভু দা চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসে আড়মোড়া ভাঙল। 

আমি মাথা নেড়ে হেসে বললাম- "Good morning! নিচে চলো। ব্রেকফাস্ট রেডি।" 

 "Okay!You go ahead. I am coming in a bit." -কথাটা শেষ করে ঋভু দা খাট থেকে নেমে বাথরুমের দিকে গেল। আমি বিছানায় পড়ে থাকা আধখোলা বইটা বন্ধ করে গুছিয়ে রাখলাম। বেডসাইড টেবিলে উল্টে রাখা চশমাটাকে সোজা করে বন্ধ করলাম। ঋভু দা বরাবরই এরকম। রাত্রিবেলা বই না পড়লে ওর ঘুম আসে না। আলগা হাতে আমি জামা কাপড়গুলো ভাজ করতে থাকলাম। ঋভু দা বাথরুম থেকে টাওয়ালে মুখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে এল। চেয়ারের উপর টাওয়ালটা ঝুলিয়ে রেখে ও বলল- "আরে আমি করে নেব। leave it." আমিও চেয়ারের দিকে ঘুরতেই ঋভু দার মুখোমুখি হলাম। ঋভু দা আমার দিকে তাকাল। নীল সমুদ্র দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমার হৃদস্পন্দনও  বাড়ছে সমানতালে। ঢিপ ঢিপ ঢিপ ঢিপ! ঋভু দার চোখের বারমুডা ট্রাইঙ্গেলে আমি তলিয়ে যাচ্ছি। 

"দিদিভাই!"- নিচ থেকে দাদুন ডাক দিল। আমি চোখ সরাতে পারছি না। ঋভু দার চোখের পাতাগুলো এখনো ভেজা ভেজা। ঋভু দা তাকিয়ে আছে এখনো। চেয়ারের মাথায় রাখা আমাদের দুজনের হাত। হঠাৎ ওর হাতের স্পর্শ লাগল আমার হাতের কোণায়। একটা স্বল্পসময়ের ইলেকট্রিক তরঙ্গ চলে গেল আমার মধ্যে দিয়ে। মনে হচ্ছে আমার সারা শরীরে প্রজাপতি উড়ছে। 

ভিজে টাওয়ালটা হঠাৎ আমার পায়ে পড়তেই আমার ঘোর কাটল। আমি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করলাম। নিচ থেকে আবার দাদুন ডাক দিল- "দি-দি-ভা-ইইই!" 

ঋভু দা সম্বিৎ ফিরে পেয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল- "দাদুন ডাকছে। let's go." ওর মুখে একটা নরম হাসি ভাসছে।

ঋভু দা'কে আমি কখনো এইভাবে হাসতে তো দেখিনি। তাহলে কি.....!

             ..............To be continued